সমান্তরাল

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

Salma Siddika
  • ২১
  • ৬০
ওরা চার বান্ধবী ক্লাস শেষে প্রায়ই বুমার্সে লাঞ্চ খেতে যায়।

একেকবার একেকজনের পালা থাকে পে করার। আজকে ফারিয়ার পালা। চারজনেরই প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। আজাদ স্যার জটিল একটা এসাইনমেন্ট দিয়েছেন, সেটার কাজ করতে করতে ওরা সবাই খুব টায়ার্ড। ফারিয়া তার মানিব্যাগ খুলে হা হয়ে গেল। উফফ, আম্মুর কাছ থেকে টাকাটা নিয়েছিলো, ব্যাগে ঢোকাতে ভুলে গেছে।

'দোস্তরা, আমার কাছে তো টাকা নাইরে', মুখ দুখী দুখী করে বললো ফারিয়া।

'মানে কি? আজকে তোর খাওয়ানোর কথা, আমাদের কারো কাছে টাকা নাই, ফালতু কথা না বলে টাকা বাইর কর।' রাগ করে বললো জেবা। ও সব সময় একটু উত্তেজিত থাকে।

'আচ্ছা ঠিক আছে, এত গরম হবার কিছু নাই, .... চিল্ .... , আমাদের সবার টাকা মিলায়ে দেখি কতো হয়, তারপর খাই', মিথিলা বললো।

সবার টাকা মিলিয়ে ৪৭৫ টাকা হলো, চারজনের লাঞ্চ এতে হবে না। ওরা ঠিক করলো স্ন্যাক জাতীয় কিছু খাবে। জেবা রাগ করতে লাগলো। ফারিয়া অপরাধী মুখ করে বসে থাকা ছাড়া আর কি করবে।

'এক্সকিউজ মি, আমি কি আপনাদের সাথে একটু কথা বলতে পারি?'

একটা ছেলে ওদের টেবিলের পাশে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে মাঝে মাঝে ওরা দেখেছে, এখানে লান্চ করতে আসে।

'কি ব্যাপার?' জেবা একটু ধমক দিয়ে জানতে চাইলো।

'আসলে ... কিভাবে বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না, যদি মাইন্ড না করেন বসে বলি প্লিজ।'

ফারিয়া, মিথিলা আর নিশি কিছু বলার আগেই জেবা বলে উঠলো, 'আচ্ছা বসে বলেন।'

'আসলে আমি একটা বাজে ধরনের ঝামেলায় পরেছি। আগে আমার ইন্ট্রো দেই, আমি নিলয়, এই পাশেই ব্র্যাক ব্যাংকে রিসেন্টলি জয়েন করেছি।। এখানে প্রায় আসি লাঞ্চ করতে, আপনাদের মাঝে মাঝে দেখেছি।'

'আপনার প্রবলেমটা কি শুনি?' একটু বিরক্ত হয়ে জেবা জানতে চায়।

'বলছি। আমার সবচেয়ে ক্লোজ এন্ড বেস্ট দুই ফ্রেন্ড অস্ট্রেলিয়া থেকে রিসেন্টলি এসেছে। একজনের বিয়ে। হয়েছে কি, ওরা সব সময় আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, কারণ আমার গার্লফ্রেন্ড নাই। এমন কোন জোক নাই ওরা আমাকে নিয়ে করে না। ওরা আসার কিছুদিন আগে আমি বলেছি আমার একটা এফেয়ার হয়েছে। ট্রাস্ট মি, ওদের যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এটা বলতে হয়েছে। আমি জানতাম না ওরা দেশে আসছে, এখন আসার পর থেকে আমাকে জ্বালাচ্ছে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবে। আমি পড়েছি বিপদে, এখন গার্লফ্রেন্ড কোত্থেকে আনবো। এখন প্রবলেম হচ্ছে একটু আগে ফোন করেছে আমি কোথায়, আমি বললাম বুমার্সে লাঞ্চ করতে যাচ্ছি। আমাকে জিজ্ঞেস করলো সাথে গার্লফ্রেন্ড আছে কি না, আমি গাধার মতো বলেছি আছে। এখন বললো ওরা কাছেই কোথায় আসছে শপিং করতে আমাদের সাথে দেখা করছে, এক্ষণই আসবে।’

ওদের চারজনের কপাল কুঁচকে গেছে। এই লোক আসলে চাচ্ছেটা কি?

'প্লিজ, আপনাদের মধ্যে কেউ কি কিছুক্ষণের জন্য আমার গার্লফ্রেন্ডের অভিনয় করবেন ? আমি জানি এটা একটা স্ট্রেন্জ রিকোয়েস্ট, বাট আই প্রমিজ ইউ ইট ওন্ট হার্ট এনিওয়ান। আমার ফ্রেন্ডগুলা সামনের সপ্তাহ থেকে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, আর ওরা এরপর আমাকে এটা নিয়ে আর যন্ত্রণা করবে না।'

জেবা পুরাপুরি উত্তেজিত, বললো, 'আরে ভাই আপনি ভাবলেন কিভাবে আমাদের মধ্যে একজন এইটা করতে রাজি হবে ? আপনি অন্য কাউকে ধরেন, আপনাকে চিনি না জানি না, কি অদ্ভুত আবদার! আমরা এগুলার মধ্যে নাই।’

‘দেখুন আমার হাতে সময় নাই যে আমি অন্য কাউকে রিকোয়েস্ট করবো। লাস্ট উইক আপনারা আপনাদের কোন ফ্রেন্ড এর বার্থডের জন্য এখানে একটা প্র্যাঙ্ক করেছিলেন, তখন আমি এখানে ছিলাম। আমার মনে হয় আপনারা আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন, প্লিজ।'

লাস্ট উইক আবীরের বার্থডেতে এখানে সারপ্রাইজ পার্টি করেছিলো ওরা সব বন্ধুরা মিলে। অনেক ফ্রেন্ডস এসেছিল। আবীর জানতোই না। বার্থডে পার্টি শেষে সবাই একে একে চলে গেলো, রইলো শুধু আবীর। বিল যখন আসলো তখনতো আবীরের মাথায় হাত! এতো টাকা তার কাছে নাই, ম্যানেজার মারুফ ভাইয়াকে গিয়ে বললো বাসা থেকে টাকা এনে দিবে, কিন্তু উনি তো যেতেই দিবে না। রাগ শুরু করলো আবীরের সাথে। আবীরের চেহারা হয়েছিলো দেখার মতো। ওরা সবাই আড়াল থেকে সব দেখছিলো আর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যাচ্ছিলো। ঘটনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, আবীর অলমোস্ট কেঁদেই দিবে, তখন ওরা সব আড়াল থেকে বের হয়ে আসলো। হাতে বিশাল একটা বার্থডে কেক আর মুখে হ্যাপি বার্থডে গান! আবীর এতো অবাক হয়েছিলো! সব বিল আগেই দেয়া ছিলো, আর মারুফ ভাই প্র্যাঙ্কে হেল্প করেছিলো। তখন রেস্টুরেন্টে যারাই ছিলো সবাই ক্ল্যাপ করেছিলো।

'দেখেন, মারুফ ভাই আমাকে ভালো করে জানে, আমি খারাপ ছেলে নই, আই জাস্ট নিড এ লিটল ফেভার।’

'আমরা কেন শুধু শুধু আপনাকে হেল্প করবো ?'

'ও কে, আমি আজকে আপনাদের সব খাবারের বিল দিয়ে দিবো, যতো খুশি খান কোনো প্রবলেম নাই, খাবারের পর আইসক্রিমও খেতে পারেন।'

আইসক্রিমের কথা শুনে ওরা সবাই একটু গলে গেলো। এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। ওদের যে কোন এডভেন্চার করতে কোন আপত্তি নাই।

'আমাদের একটু সময় দেন আমরা একটু কথা বলে নেই' মিথিলা বললো।

নিলয় পাশেই একটা টেবিলে বসলো।

'দোস্ত, কিরে কি করবি?' ফারিয়া জানতে চাইলো।

'আমার কি মনে হয় জানিস, এটা কোন টিভি প্রোগ্রামের প্র্যাঙ্ক, আজকাল এই ধরনের রিয়েলিটি শো হচ্ছে, একসময় দেখা যাবে লুকানো ক্যামেরা, লুকানো লোকজন বের হয়ে আসবে।' ফিস ফিস করে বলে নিশি।

'আরে বাবা আমাদের লাগছে খিদা, পকেটে টাকা নাই, এই লোক আমাদের খাওয়াবে, এতে প্রবলেম কি? এ্যাকটিং-এর বিনিময়ে খাদ্য' ... জেবার উত্তেজনা বোঝা যায়।

'তুই কি খাদ্য ছাড়া কিছু বুঝিস না? কোনো ঝামেলা যদি হয়?' ফারিয়া বললো।

'ঝামেলার কি আছে ? উনি আমাদের চিনে না,আমরা উনাকে চিনি না, কিছুক্ষণের জন্য এ্যাকটিং করতে হবে, তোর কাছে টাকা থাকলেতো আজকে এই কথা বলতাম না, ঠিক না ফারিয়া ?' জেবা ফোড়ন দিলো। মিথিলা আর নিশিও মনে হচ্ছে জেবার কথায় সাপোর্ট করছে।

'আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু কাজটা করবে কে ?’ ফারিয়া জানতে চাইলো।

'তুই করবি, তুই ড্রামা ক্লাবের মেম্বার, এ্যাকটিং তোর ভালো হবে। তাছাড়া আজকে কার জানি খাওয়ানোর কথা ছিলো, কিন্তু টাকা আনে নাই?’ ... জেবার পিন ফোটানো কথার স্বভাবটা গেলো না।

'আমার মনে হয় তুই-ই কর, তুইতো এ্যাকটিং পারিস' নিশি বললো, ‘তাছাড়া এটা যদি রিয়েলিটি শো হয় তাহলে তুই সুপারস্টার হয়ে যাবি'।

কিছুক্ষণ এই ধরনের আলোচনা শেষে এ্যাকটিং করার সিদ্ধান্ত হলো, এবং দায়িত্বটা ফারিয়ার ঘাড়ে পড়লো।

শেষ পর্যন্ত ফারিয়া রাজি হতে বাধ্য হলো।

এর বিশ মিনিট পর নিলয়ের বন্ধু সাদী আর ইশার চলে আসলো, তাদের সাথে দুইটা মেয়ে, একজন সাদির হবু বউ আরেকজন ইশারের গার্লফ্রেন্ড। নিলয় ওদের সাথে ফারিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিলো, 'ফ্রেন্ডস, এ হচ্ছে মীনা '। আগেই ঠিক হয়েছিলো ফারিয়ার আসল নামটা বলা যাবে না, কিন্তু তাই বলে মীনা ? আর কোন নাম মনে আসলো না নিলয়ের!

'হাই মীনা, তোমার ভাইয়ের নাম মিঠু নাতো? হাহাহাহা' সাদী বললো।

রাগে ফারিয়ার অসহ্য লাগছিলো। একে তো লেইম জোক, আবার তুমি করে বলছে কেন সাদী তাকে ? কিন্তু হাসি হাসি মুখে থাকতে হবে।

'কোথায় পড়ো তুমি ?’ ইশার জানতে চায়।

'নর্থ সাউথ’ ফারিয়া বললো, আর ঠিক একই সাথে নিলয় বলে উঠে 'আই ইউ বি' ... দুজন কনফিউসড হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। ফারিয়ার প্রচন্ড রাগ হয়। এই হাদারামতো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারবে, ধরা খেতে বেশিক্ষণ লাগবে না হাদাটার।

'না, মানে আমি এন এস ইউতে, একটা ওয়ার্কশপ করেছিলাম আই ইউ বি-তে, ওটাই নিলয়ের মাথায় ঘুরছে' নিলয়ের পেটে কলম দিয়ে একটা খোঁচা মেরে বললো ফারিয়া।

মেয়ে দুইটা তীক্ষ্ণভাবেই খেয়াল করছে ফারিয়াকে, একটু অস্বস্তি লাগে ওর। কিন্তু ড্রামা ক্লাবে ভালোই এ্যাকটিং শিখেছে ফারিয়া, সুন্দরভাবে আড্ডা জমিয়ে নেয় ও। পাশের টেবিল থেকে ওর তিন বান্ধবী দেখে পুরা ঘটনা। নিশি অপেক্ষা করে কখন আড়াল থেকে লুকানো ক্যামেরা আর লোকজন বের হয়ে আসবে। কিন্তু কিছুই হলো না। সুন্দরভাবে লাঞ্চ শেষ হলো, মীনাকে ওদের সবার পছন্দ হতে দেরী লাগলো না।

চার বান্ধবী মহা আনন্দে বিশাল একটা খাবার অর্ডার করলো, আর পুরা ব্যাপারটা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা আর হাসাহাসি করলো। নিলয় সব বিল দিলো, অনেকবার থ্যাঙ্কস বললো। ফারিয়ার মনে হলো, এতো চমত্কার একটা ছেলের গার্লফ্রেন্ড নাই কেন ?


-------------------------------------
আজাদ স্যারের এসাইনমেন্ট নিয়ে ফারিয়ার মাথা খারাপ। রাত ১২টায় তাই কম্পিউটারে কাজ করছিলো ও। মনযোগ যখন চূড়ান্ত, ওর মোবাইলে অমিত ফোন দিলো।

'ফারিয়া এইসব কি হচ্ছে ?'

'কি হয়েছে ? ফোন করেই চিল্লাচ্ছো কেন ?’

'কিছু বুঝোনা ? না ? তুমি প্রেম করো আমার সাথে, আর কয়জনের সাথে ডেট করো জানতে পারি ?'

'কি বলো এইসব ? আমি কারও সাথে ডেট করি নাই। আন্দাজে কথা বলবা না।’

'ফারিয়া শোনো, অনেকবার বলেছি, তোমার ছেলেবন্ধু আমার পছন্দ না। তারপরও তুমি দুনিয়ার ছেলেদের সাথে মিশো, আমি কিচ্ছু বলি না। কিন্তু তুমি অন্য আরেকজনের সাথে প্রেম করবা আমি তাকায় তাকায় দেখবো, এইটাতো হবে না।’

'কি হয়েছে বলবা একটু চিল্লানো বন্ধ করে'

'তোমার ছবি দেখলাম ফেইসবুকে। অন্য একজনের সাথে ক্লোজ হয়ে বসে আছো, আমার এক ফ্রেন্ডের কমন ফ্রেন্ড ছবিটা দিয়েছে। নিলয় না ফিলয় কি জানি নাম, ট্যাগ করা নাম দেখলাম। এর নীচে ক্যাপশন, নিলয় এন্ড হিজ গার্লফ্রেন্ড। আমাকে বলবা এইসবের মানে কি ?’

'কোন ছবি ?'

তোমাকে ট্যাগ করছি, ফেইসবুক খুলে দেখো।’

উফফ, নিলয় আবার ছবি দিয়েছে ফেইসবুকে! লোকটার মাথায় কি ঘিলু নাই ? কথা ছিলো ঘটনা ওখানেই শেষ হয়ে যাবে, এখনতো বিরাট গিট্টু লেগে গেলো!

'আরে বাবা শুনো, সেইটা একটা এ্যাকটিং ছিলো। আমি কালকে তোমাকে সব বুঝায় বলবো।'

‘আমার বুঝা হয়ে গেছে, বুঝলা, তুমি এ্যাকটিং করো ? কয়জনের সাথে এ্যাকটিং করো তুমি ? নাকি আমার সাথে এ্যাকটিং করো ? এক বছর প্রেম করার পর আমার এইটা দেখতে হলো, লজ্জায় আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। তোমাকে আমি আর ট্রাস্ট করতে পারছি না। তুমি আসলে একটা চিটার। তোমার মতো মেয়ের সাথে প্রেম করাই আমার ভুল হয়েছে।’ চিত্কার করে বলতেই থাকে অমিত।

'তোমার কথা শেষ হয়েছে ? তোমার এইসব শুনার সময় আমার নাই, আমি বলছি ঐটা একটা এ্যাকটিং ছিলো, তুমি চিল্লাচ্ছো, .... তোমার বকবক আর শুনবো না’।

ফোনটা কেটে দিলো ফারিয়া। রাগে গা রি রি করছে। নিলয়ের কথায় রাজি হওয়াটাই তার ভুল ছিলো। এতো অপমান হতে হলো তাকে, রাগে কান্না আসছে। অনেক বড় বোকামি হয়েছে, অনেক বড়। নিলয় গাধাটার ফোন নম্বরও নাই যে ফোন করে রাগটা ঝাড়া যায়।

পরদিন ভীষণ ঝগড়া হলো অমিত আর ফারিয়ার। অমিত কিছুতেই বিশ্বাস করে না যে ফারিয়ার কোন দোষ ছিলো না। বেশ কিছুদিন ধারাবাহিক ঝগড়ার শেষ হলো ওদের ব্রেক আপ দিয়ে।


-------------------------------------------------
নিলয় অফিস থেকে ফিরে দেখে তার খালা রুবিনা এসেছেন, মায়ের সাথে বেডরুমে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছেন। তার এই খালা সাজগোজে সিনেমার নায়িকাদের ছাড়িয়ে গেছেন। তার মা সেই তুলনায় অনেক সাধারণ।

'নিলয়, আমার রুমে আয়' মায়ের ডাক শুনে দেখতে গেলো নিলয়।

'তোর একটা রিলেশন হয়েছে , আমাকে বলিস নাই কেন ?’ মা জানতে চান।

'কিসের রিলেশন ?'

'তোর গার্লফ্রেন্ড হয়েছে না ?' রুবিনা বললেন।

'আমার আবার কবে হলো গার্লফ্রেন্ড ?'

'আমি ফেইসবুকে দেখলাম তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছবি, রেস্টুরেন্টে '।

নিলয় আকাশ থেকে পড়লো। ঘটনার সারমর্ম হচ্ছে সেদিন ফ্রেন্ডরা কেউ ছবি তুলেছিলো আর ফেইসবুকে দিয়েছে। কাজের চাপে গত দুইদিন ফেইসবুক চেক করা হয়নি। এদিকে তার খালা আছে ফ্রেন্ড লিস্টে, উনি দেখে মা-কে ঘটনা বলতে এসেছেন।

'তুই আমার কাছে কেন লুকালি ব্যাপারটা আমি বুঝলাম না। তোর বাবা রাগ করবে কিন্তু আমি তো রাগ করতাম না।' অভিমান করে মা বললেন।

'মা ওটা আমার গার্লফ্রেন্ড না। ফ্রেন্ডসরা ফান করে লিখেছে।’

'আবার মিথ্যা কথা ? তোরা যেভাবে বসে ছিলি তাতে বুঝা যাচ্ছে তোদের রিলেশন কি। এখন বল মেয়েটাকে কবে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি, আমার আর তোর মায়ের কিন্তু মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে।’ আনন্দ লুকাতে পারেন না রুবিনা।

'তোর বাবাকে বোঝাতে একটু কষ্ট হবে, তার এইসব প্রেম ভালোবাসা পছন্দ না। কিন্তু ছেলের খুশির জন্যতো করতেই হবে।’ একটু কপট রাগ দেখিয়ে মা বললেন।

'দুলাভাইতো বুঝলোনা, ছেলের জন্য বউ খুঁজার যে কি যন্ত্রণা, তার থেকে তো মুক্তি পাওয়া গেলো।’

' মা আর খাল্লাম্মা শোনো, ওটা আমার গার্লফ্রেন্ড না। ফ্রেন্ডসরা ফান করেছে।'

'ফান টান যাই হোক, মেয়েটা আমাদের পছন্দ হয়েছে। তুই একবার আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দে।'

রুবিনা খালা আর মা প্রচন্ড আনন্দ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। মায়ের এমন আনন্দ অনেকদিন পর দেখলো নিলয়। আনন্দটা নষ্ট করে দিতে একটুও ইচ্ছা করছে না।


-------------------------------------------------
ফোন বাজছে অনামিতার। বিয়ের ঝামেলায় তার ফোনে কথা বলারও সময় নাই। ফোন করেছে রিনি। মেয়েটা একবার ফোন করলে রাখতেই চায় না, বকবক করতেই থাকে। অনামিতা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোন ধরলো। যতো হোক, হবু স্বামী সাদীর ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড। সাদী কোথায় কি করছে না করছে, ওর কাছ থেকে সব খবর পাওয়া যায়। বিয়ের পর এইরকম একটা ইনফর্মার সব মেয়ের দরকার।

'হাই অনামিতা আপু, কেমন হচ্ছে বিয়ের প্রিপারেশন ?'

'এইতো হচ্ছে, কোনো দরকার ছিলো রিনি ?'

'নাহ, এমনি ফোন দিলাম। সেদিন অনেক মজা হলো তাই না, ঐদিনের সব ছবি ফেইসবুকে দিয়েছি, দেখেছো ?'

'ওহ হ্যাঁ দেখলাম, সুন্দর হয়েছে।'

'আমি লুকিয়ে লুকিয়ে নিলয় ভাই আর মীনার একটা ছবি তুলেছিলাম, নিলয় ভাইতো ছবি তুলতেই চাচ্ছিলো না।'

'হু'

'আসল কথা তোমাকে বলাই হয় নাই। সেদিন ঐ যে নিলয় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড মীনা আছে না ? ওর ইউনিভার্সিটি আই ডি ব্যাগে ঝুলানো দেখলাম। নাম দেখলাম ফারিয়া হাসান। আমি ভাবলাম নিক নেম হয়তো মীনা। তাছাড়া কোন ইউনিতে পড়ে সেটা নিয়ে দুইজন যে ফাম্বল করলো দেখেছিলে ? আমি দেখেই সন্দেহ করছিলাম, নিলয় ভাই গার্লফ্রেন্ডের ইউনিভার্সিটি জানে না, কেমনে হয় ? আমি ফেইসবুকে ছবি আপলোড করালাম আমার একটা এন এস ইউর ফ্রেন্ডকে দিয়ে, ব্যাপারটা ভেরিফাই করার জন্য। ও তো দেখে বললো ঐ মেয়ে মীনা ফীনা কেউ না, ওই মেয়ের নাম ফারিয়া। একশ পারসেন্ট সিওর। তার বয়ফ্রেন্ড আছে এন এস ইউতে, অমিত নাম। দেখেছো কান্ড, এন এস ইউতে একটা প্রেম করে আবার বেচারা নিলয় ভাইকেও ঘুরাচ্ছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে , নামটাও মিথ্যা বলছে। কি রকম বাজে মেয়ে দেখেছো ? আমি তো নিলয় ভাইয়ের জন্য দুঃখে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমি ইশারকে বলেছি, ও বললো কাউকে না বলতে। কিন্তু আমারতো মনে হয় সাদী ভাই আর তোমার জানা উচিত। ইশারকে বললাম নিলয় ভাইকে বলতে, ও বলবে না। তুমি সাদী ভাইকে বলো আলাপ করতে, নিলয় ভাই যে রকম বোকা কিছুই হয়তো জানে না। উনার জানা উচিত না বলো ? তুমি না বললে আমি ফোন করে সরাসরি নিলয় ভাইয়ের সাথে কথা বলবো ।'

'আচ্ছা বলো। আমি রাখি রিনি, শপিং-এ আসছি তো, ঝামেলায় আছি।'

ফোন রেখে দেয় অনামিতা। তার সব চিন্তা এখন তার বিয়ে নিয়ে, আর কিছু নিয়ে ভাবনার সময় ওর হাতে নাই।


----------------------------------------------------------------------------------
(এক মাস পর)
সেমেস্টার ব্রেকের পর নিজেকে গুছিয়ে আবার ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শুরু করেছে ফারিয়া। গত সেমেস্টারে ব্রেক আপের পর বেশ কিছুদিন লেগেছে নিজেকে সামলাতে। এসাইনমেন্ট জঘন্য হয়েছে, রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। ফেইসবুক ডিএক্টিভেট করেছে। ফারিয়া নিজেকে শক্ত করেছে। অমিততো ওর জন্য থেমে নেই, এর মধ্যেই আরেকটা মেয়ের সাথে ডেট করছে, মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে। কষ্ট লাগলেও বুঝে অমিত কতো সহজেই ভুলে গেছে ওকে। হয়তো এটাই ভালো হয়েছে ফারিয়ার জন্য। তার জন্য অমিত হয়তো ভুল মানুষ ছিলো।

চুপচাপ থাকে ফারিয়া। জেবা, মিথিলা আর নিশির খুব অপরাধী লাগে, মনে হয় ওদের জন্যই আজকে ফারিয়ার এই অবস্থা।

একদিন ওরা আবার বুমার্সে খেতে যায়। সেইদিনের পর আজকেই প্রথম।

হঠাত নিলয়কে দেখতে পায় ফারিয়া, দূরে একটা টেবিলে বসে আছে। ওর সাথে আরও কয়েকজন আছে। নিলয়কে দেখে ফারিয়ার পুরানো সব রাগগুলো জেগে উঠে।

নিলয় এগিয়ে আসে।

'আমি জানি আমার উপর তোমার অনেক রাগ, আমি তার জন্য দায়ী আমি জানি। কিন্তু একবার আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে।'

'আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছেন ? আমার ছবি কেন তুলেছিলেন আপনি, কেন আবার সেটা ফেইসবুকে দিয়েছেন ? কোন রাইট ছিলো না আপনার সেটা করার ।'

'সরি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমাকে আপনি করে বলেছিলাম। সেদিন অনেকক্ষণ তুমি করে কথা বলেছিলাম, তাই ভুলটা হয়েছে। সরি। আপনি করেই বলছি। আমি কিন্তু ছবিটা তুলিনি, ইশারের গার্লফ্রেন্ড রিনি লুকিয়ে ছবিটা তুলেছিলো। আমি তাকে ছবি তুলতে বারণ করেছিলাম। আমি জানতাম না ছবিটা আপলোড হয়েছে। পরে কিন্তু আমি ছবিটা ডিলিট করার ব্যবস্থা করেছি। আপনি ফেইসবুকে ঢুকে চেক করতে পারেন।'

'আপনার কোন কথাই শোনার আসলে কোন দরকার আমার নাই, যা হবার সেটা হয়ে গেছে। আপনার ফোন নম্বরটা তখন আমার কাছে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ গালিগুলা আপনাকে দিতাম।'

'আর আপনার নম্বর আমার কাছে থাকলে আমি হাজার বার আপনাকে ফোন করে সরি বলতাম। সেদিন সেইসব করে আসলে আমার কোন লাভ হয়নি, আমার ফ্রেন্ডসরা সত্য জেনে গেছে। আরও বেশী হাসির পাত্র হয়েছি আমি। কিন্তু আপনার সাথে যা হয়েছে তা আমি কখনোই চাইনি। আমি জানিনা কি করলে আপনার কষ্ট আমি দূর করতে পারবো। প্রতিদিন আপনার কথা আমার মনে হয়েছে। আমি প্রায়ই এখানে এসে আপনাকে খুঁজেছি সরি বলার জন্য। আপনাকে খুঁজে পাইনি। আমি কি করলে আপনার ভালো লাগবে বলেন, আমি সেইটাই করবো।'

ফারিয়া কি বলবে বুঝতে পারে না। এসব কিছু কি তার ভালোর জন্য হলো না খারাপের জন্য এখনো ঠিক বুঝতে পারে না ও।

নিলয় বললো 'আপনি কিছু মনে না করলে একটা রিকোয়েস্ট করবো, আবার? আমার ফোন নম্বরটা আপনাকে দিচ্ছি, যখন আমাকে গালি দিতে ইচ্ছা করবে, যখন যা কিছু দোষ আমাকে দিতে ইচ্ছা করবে, যা ইচ্ছা বলতে ইচ্ছা করবে রাগ কমানোর জন্য, আপনি, তুমি, তুই যা বলতে ইচ্ছা করবে, আমাকে ফোন করবেন, প্রমিস করছি, আমি ফোন ধরে সব গালাগালি শুনবো।'

ফারিয়া ওর ফোনে নম্বরটা সেভ করে নেয়। এই লোকটাকে প্রতিদিন গালাগালি করলে তার হয়তো একটু ভালো লাগবে।

আজকে রাতেই ফোন করবে ফারিয়া।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Shuvo Rahman খুব ভাল লাগলো ....:-)
আদিত্য খুব ভাল লাগলো ........... অসাধারণ
মিলন বনিক চমত্কার গল্প...কাহিনী, বুনন, বিন্যাস....খুব সাবলীল এবং সুন্দর ভাবে ফুটে উটেছে....খুব ভালো লগলো....
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
সাফাত সোয়েব বিস্ময় ভালো লাগলো!
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ঐশিকা বসু আপনার গল্পটা পড়ে খুব ভাল লাগল। আপনার ক্রিয়েটিভিটির তারিফ করি। যেভাবে আপনি একটা প্র্যাঙ্ককে শেষমেষ সত্যি করে তুললেন তাকে না ভাল লেগে পারে? খুব আনন্দ পেলাম আপনার গল্প পড়ে। ভাল থাকবেন দিদি।
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ , সবার এত ভালো ভালো কমেন্ট পেয়ে অনেক অনুপ্রেরণা পেলাম
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
বর্ণা আহমেদ সালমা লোভ সামলাতে পারলাম না, আবারও পড়ে গেলাম এক বসাতে। আরও লিখছো নিশ্চয়ই। চালিয়ে যাও,
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
apu inshaallah aro likhbo, thanks for the comment, you are the 1st person who commented on my writing and that was very special
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
দীপঙ্কর বেরা ভাল গল্প । সুন্দর লেখা
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
onek onek dhonnobad
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
সাদিয়া সুলতানা স্বাগতম ও শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
onek dhonnobad
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু বর্তমান প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার মত একেবারে সময়ের সাথে তাল মিলানো গল্প, চমৎকার লিখেছেন। স্বাগতম গল্প কবিতায়, নিয়মিত লিখা পাবার আশাবাদ রাখছি, অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
onek dhonnobad.
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
সেলিনা ইসলাম আধুনীক বাস্তবতার ছাপ গল্পে খুব সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন আরো ভাল লিখুন সেই প্রত্যাশায় শুভ্কামনা
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
Onek dhonnobad
ভালো লাগেনি ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

২২ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪